ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩ঃ “দলিল যার, জমি তার” সিদ্ধান্ত দিয়ে সংসদে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩ পাস হয়েছে। ফলে কেবল দখলে থাকলেই হবে না। বরং জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে তাকে জেল ও জরিমানা গুনতে হবে। নিচে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩
গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন এবং ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।
বিলে বলা হয়, ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনও ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ কারও কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণ সংবলিত কোনও দলিলে সই করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
বিলে আরও বলা হয়, কোনও দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনও অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনও মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই। এছাড়া প্রতারণামূলকভাবে কোনও ব্যক্তিকে কোনও দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।
নতুন আইন অনুযায়ী, সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকার সূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনও মালিকানা বা দখলের অধিকারপ্রাপ্ত না হলে কোনও ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩’ উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
বিলটি উত্থাপন প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলের প্রশংসা করে বিলটি সংসদে উত্থাপনের জন্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
বিলটির বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। নাগরিকদের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলসহ প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধসমূহ প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, ভূমি থেকে বেআইনি দখল, স্থাপনা বা প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং ওই ভূমিকে এর আগের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণ এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত গ্রহণসহ অংশীজনের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে প্রস্তাবিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে
পরিশেষে
আশা করি, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩ সম্পর্কে আপনি সঠিক তথ্য পেয়েছেন। নতুন এই বিলের মূল কথা হলো দলিল যার জমি তার। অর্থাৎ, যার জমির দলিল আছে সেই মূলত জমির মূল মালিক। এই বিল পাস হবার পর থেকেই মানুষের মনে একটু স্বস্তির ভাব দেখা যাচ্ছে। তো বন্ধুরা, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩ পক্ষে না বিপক্ষে আপনি তা কমেন্ট করে জানাবেন।