তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? সহজে কিভাবে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার যায়,সে বিষয়ে সমাধান খুঁজছেন? তাহলে আপনাকে আজকের এই টিউটোরিয়াল মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। কারণ আজকে আপনাদের সামনে তৈলাক্ত ত্বকে কিভাবে ব্রণ দূর করা যায় সে সম্পর্কে সহজ উপায় সমূহ আলোচনা করা হবে।
বয়সন্ধিকালে প্রত্যেক মানুষের মুখে ব্রণ উঠে থাকে। কারো বেশি ওঠে আবার কারো কম ওঠে। তবে সত্যি কথা হল ব্রণ মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও ব্রণের দাগের কারণে মুখ অনেক বিশ্রী হয়ে যায়।
সেই কারণে আমরা চাই ব্রণ থেকে বাঁচার জন্য। প্রকৃতপক্ষে বাঁচতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আপনি যদি দীর্ঘ ১৫ থেকে ৩০ দিন আমাদের নিয়ম সঠিকভাবে ফলো করতে পারেন। তাহলে ইনশাল্লাহ আপনি ব্রণ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। চলুন তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় গুলো কি কি তা জেনে নেই।
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়
আমরা সবাই জানি, ব্রণ আমাদের মুখের সৌন্দর্য কেড়ে নেয়। তাই আপনার মুখে যদি ব্রণ হয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে হবে। বর্তমান সময়ে ব্রণের দাগ দূর করার অনেক ঔষধ রয়েছে। তবে এ সকল ওষুধ ব্যবহার করলে আপনার মুখের ক্ষতি হতে পারে।
এই কারণে আপনাকে অবশ্যই ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে হবে। তাই আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা বেশ কয়েকটি কার্যকারী তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় নিয়ে হাজির হয়েছি। চলুন এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
তুলসি পাতার রস
ব্রণের জন্য তুলসি পাতার রস খুব উপকারী। কারণ তুলসি পাতায় আছে আয়ুর্বেদিক গুণ। শুধুমাত্র তুলসি পাতার রস ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
চন্দন কাঠের গুঁড়া, গোলাপ জল ও লেবুর রস
প্রথমে চন্দন কাঠের গুঁড়ার সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশান। গোলাপজল অনেকের ত্বকের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট হয় না। তারা সেই ক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণ আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
ডিম ও মধু
যাদের ত্বক শুষ্ক এবং ব্রণে আক্রান্ত তাদের জন্য এই প্যাক। এটি ডিমের সাদা অংশ, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ অলিভ অয়েল নিন। উপকরণগুলো ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কোনো ক্ষতি ছাড়াই এতে দূর হবে ব্রণ।
বেকিং সোডা
ঘরোয়া এই উপাদান রূপচর্চায় বিভিন্নভাবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি ব্রণ দূর করতে চমৎকার কাজ করে। বেকিংসোডার সঙ্গে পানি অথবা মিল্ড ক্লিনজার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট ত্বকে কিছুক্ষণ ঘষতে থাকুন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মোলায়ে ত্বক দেখতে পাবেন।
শসার রস
শশার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শশার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। এছাড়াও শসা থেঁতো করে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিন মুখ।
পেঁপে ও চালের গুঁড়া
ব্রণ হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে চটকে নিন এক কাপ। এর সঙ্গে মেশা এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের গুঁড়া। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। ২০-২৫ মিনিট ম্যাসাজ করে গোসল করে ফেলুন। পেঁপে ছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারীর রস।
পুদিনা পাতা
অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় সেগুলো দূর করতেও পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট এরপর ধুয়ে ফেলুন।
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেস্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে এবং গায়ের রং হালকা করে। সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি কয়েকদিনের মধ্যে পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।
ব্রণ থেকে বাঁচার উপায়
উপরে আমরা তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় কি কি তা জানলাম। এখন আমাদের জানতে হবে ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া। প্রথমত ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এর পাশাপাশি নিচের নিয়ম গুলো মেনে চললেই আপনি ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন।
প্রতিদিন ৯-১০ গস্নাস পানি পান করুন। প্রতিদিন রাতের খাবারের পর যে কোনো ধরনের মৌসুমি ফল খান। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে। যতটা সম্ভব তেলযুক্ত বা ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
সব সময় বাইরে থেকে আসামাত্র মুখ ফেইস ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া হালকা গরম পানির স্টীম নিতে পারেন। এতে করে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই নখ দিয়ে ব্রণ খোঁটার বাজে অভ্যাস রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে এটা কোনো সমাধান না। উল্টো এতে ব্রণের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এর ফলে ব্রণ লাল হয়ে যাবে। এমনকি তা ফেটে গিয়ে মুখে দাগের সৃষ্টি করবে। ব্রণ না যাওয়া পর্যন্ত মেক-আপ ব্যবহার না করাই উচিত। দিনে অন্তত দুবার তেলমুক্ত ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আপনাদের সামনে ব্রণ দূর করার অনেকগুলো উপায় আলোচনা করেছি। উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই ব্রণ দূর করতে পারবেন মাত্র ৩০ দিনে।
এর পাশাপাশি কিভাবে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সে সম্পর্কেও আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রকৃতপক্ষে যাদের ত্বক অপরিষ্কার থাকে তাদের বেশিরভাগ ব্রণ উঠে থাকে। এই কারণে আপনাকে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে অবশ্যই আপনি ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন। তো বন্ধুরা, তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন কমেন্ট করে জানান।