ডায়াবেটিস এর লক্ষণ: বর্তমান সময়ে ভয়াবহ এক রোগের নাম ডায়াবেটিকস। যেকোনো বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে। এ কারণে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের ডায়াবেটিকস রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন থাকে। এছাড়াও আমাদের এই রোগ সম্পর্কে কিন্তু অনেক তথ্য জানা দরকার।
তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ,ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় ও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন দেরি না করে, মূল আলোচনা শুরু করি।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
যেকোনো বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে। এছাড়াও বর্তমানে ভয়াবহ একটি রোগ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিকস রোগ হলেই যে আপনার জীবন শেষ হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। পরিমিত খাবার, শারীরিক পরিশ্রম ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়েও ভালো থাকা যায়। তাই আপনাকে সর্বপ্রথম ডায়াবেটিস রোগ আছে কিনা তা সনাক্ত করতে হবে। চলুন ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি তা দেখে নেই।
- ঘন ঘন পিপাসা লাগা
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
- বার বার প্রস্রাব লাগা
- রাতে প্রস্রাবের কারণে ঘুম ভাঙ্গা
- ওজন কমতে থাকা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- বমি বমি ভাব হওয়া
- মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া
- মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
- একটুতেই উত্তেজিত হওয়া বা মন খারাপ করা
- মনসংযোগের অভাব হতে থাকা
ডায়াবেটিস এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই
আপনার ডায়াবেটিস রোগ আছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। তাই নিচে লক্ষণসমূহের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
ঘন ঘন পিপাসা লাগা
ঘন ঘন পিপাসা লাগা ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম লক্ষণ। এ সময় পানির তৃষ্ণা বেড়ে যায়। ঘন ঘন প্রস্রাবের ফলে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে, তাই পিপাসাও বেশি লাগে।
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
শরীরে যখন ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীর শর্করা ধরে রাখতে পারে না। শরীরে শর্করা প্রয়োজন হয় শক্তি জোগাতে। যখন শর্করার অভাব হবে তখন শরীরের শক্তি হ্রাস পায়। ফলে ক্যালরির চাহিদা বেড়ে গিয়ে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে।
ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত ভাব
ক্ষুধার চাহিদা বাড়ার ফলে শরীর দুর্বল, ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু এ সময় শরীর শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে না, তাই এই সমস্যাগুলো হয়।
ওজন কমতে থাকে
ডায়াবেটিসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ওজন হ্রাস। এ সময় রক্তে শর্করার আধিক্য ওজন কমার একটি অন্যতম কারণ। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ২০ পাউন্ড ওজন কমে যায়। তাই শরীরে ওজন মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মনসংযোগের অভাব হতে থাকা
রক্তে অতিরিক্ত শর্করার ফলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে তাই ব্যক্তি অসাড় অনুভব করতে পারে। শুধু তাই নয়, স্নায়ু দুর্বল হলে রক্তচাপ কমে যায়। ফলে মাথা ঘোরাতে পারে, দুর্বল লাগতে পারে।
দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া
রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে চোখে এর প্রভাব পড়তে পারে। যদি চোখের মণি স্ফীত হয় এবং আকারের পরিবর্তন হয় তবে হঠাৎ করে চোখে ঝাঁপসা দেখার সমস্যা হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
ডায়াবেটিসের ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে এই ঘটনা ঘটে। ফলে সহজে কোনো রোগ নিরাময় হতে চায় না।
ঘন ঘন ইনফেকশন
রক্তে শর্করার অসামঞ্জস্যতার ফলে ঘন ঘন বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ (ইনফেকশন) হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
আমাদের শরীর ৫০ থেকে ৭৮ ভাগ পানি থাকে। ঘন ঘন প্রস্রাব ও ঘাম হওয়ার ফলে শরীর শুষ্ক হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর। তাই এ সময় চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে এবং চুলকানি ভাব হতে পারে।
একটুতেই উত্তেজিত হওয়া বা মন খারাপ করা
দেহে শক্তি কমে যাওয়া এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির ফলে সব সময় খারাপ লাগা এবং বিরক্তিবোধ হতে পারে। যেহেতু শরীর শক্তি পায় না এবং কর্মক্ষম থাকে না তাই এটা আপনার মেজাজকে খিটখিটে করতে পারে।
তবে উপরের লক্ষণগুলো আপনার সাথে মিলে গেলেই আপনার যে ডায়াবেটিস রোগ হয়েছে এমন কিন্তু না। এজন্য আপনাকে ডায়াবেটিকস রোগ নির্ণয় করতে হবে। ডায়াবেটিকস রোগ নির্ণয় করা একদম সহজ ও সহজলভ্য।
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের উপায়
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ জানান পর আপনার সাথে যদি লক্ষণ গুলো মিলে যায়। তাহলে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। এখন আপনাকে ডায়াবেটিক নির্ণয় করতে হবে। অর্থাৎ পরীক্ষা করার মাধ্যমে জানতে হবে আপনার আসলেই ডায়াবেটিস রোগ হয়েছে কিনা। ডায়াবেটিক আপনি বেশ কয়েকভাবে নির্ণয় করতে পারবেন।
- প্রস্রাব পরীক্ষায় প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতিতে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা।
- রক্ত পরীক্ষায় রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেশি থাকা।
- সকালে খালি পেটে ৭.০ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হলে।
- ভরা পেটে ১১.০ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হলে।
শেষ কথা
এই ছিল আমাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি, ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে আপনি সঠিক তথ্য পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিকস পরীক্ষা করার পর আপনার যদি ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ে। তাহলে চিন্তিত হবার কিছুই নেই।
কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম ও ডাক্তারের পরামর্শ নিলে আপনি ডায়াবেটিস নিয়েও ভালো ও সুস্থ থাকতে পারবেন। ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।