কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না | ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না– বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেক মানুষের ডায়াবেটিস রোগ আছে। কারো ডায়াবেটিস অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেছে। আবার কেউ কেউ ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। আমাদের নিজেদের অসচেতনতার জন্যই মূলত ডায়াবেটিস রোগের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আমরা যদি একটু সতর্ক থাকি তাহলে অবশ্যই আমাদের ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই কারণে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আপনাদের সামনে এমন কিছু উপায় বলবো, যে উপায় গুলো অবলম্বন করলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না ও কি খেলে ডায়াবেটিস ভালো হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। আপনার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ডায়াবেটিস রোগ কি
ডায়াবেটিকস এক প্রকার বহুমূত্র রোগ, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না
বর্তমান আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত। কিন্তু এই উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করার কোন প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। এ কারণে আপনাকে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। আমরা সবাই জানি, কোন রোগের প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম।
তেমনিভাবে আপনাকে ডায়াবেটিস রোগের প্রতিষেধক না খোঁজে, কিভাবে ডায়াবেটিকস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তা আপনাকে জানতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের রাখার অন্যতম উপায় হল আপনাকে নিয়মিত নামাজ পড়া ও ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়াও আপনাকে এমন কিছু খাবার খেতে হবে যে খাবারগুলো খেলে আপনার ডায়াবেটিস হবে না। নিয়ন্ত্রণের রাখা খাবারগুলো ও কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না তা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেই।
মটরশুঁটি
হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে মটরশুঁটি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মটরশুঁটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০০ গ্রামের মতো মটরশুঁটি খেলে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় মটরশুঁকি। যদি না থাকে তবে যখন মটরশুঁটির মওসুম, তখন বেশি করে কিনে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর সারা বছর খাদ্য তালিকায় রাখুন এই সবজি। তেলাকুচা পাতা এবং ফল সবজির মতো খান। মেথি চূর্ণও খেতে পারেন।
কমলালেবু
শীতকালে সব থেকে জনপ্রিয় একটি ফল কমলালেবু। ফ্লাভনলস ও ফেনোলিক অ্যাসিড রয়েছে কমলালেবুর মধ্যে। এই দুই উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী।
পেঁপে
পেতে খেতে সবাই পছন্দ করে। পেঁপের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শুধু ডায়াবেটিস রুখতেই নয়, হার্ট ও নার্ভের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও উপকারী।
তুলসী
আমাদের খুব পরিচিত একটি গাছ হল তুলসী।ঔষধি গাছ তুলসীকে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন । গবেষণায় দেখা গেছে, তুলসীপাতা বিবিধভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খালি পেটে তুলসীপাতার রস পান করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। চাইলে তুলসীর রস আপনি চায়ের সাথে মিলিয়েও খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা
আরো পড়ুনঃ আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি
চেরি ফল
খুবই সুস্বাদু একটি ফল চেরি। ব্লুবেরির মতোই চেরিতেও রয়েছে অ্যান্থসায়ানিন। যা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস রুখতে চেরি খুবই উপকারী।
পাকা তরমুজ
গরমকালে পাকা তরমুজ খেতে সবাই পছন্দ করে। তরমুজে থাকা প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রক্তে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের প্রভাবে হওয়া কিডনির ক্ষতি রুখতে সাহায্য করে তরমুজ। এর মধ্যে থাকা লাইকোপেন নার্ভের সমস্যাও রুখতে পারে।
পাকা পেয়ার
শীতকালীন ফল গুলোর মধ্যে পেয়ারা অন্যতম। লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পাশাপাশি পেয়ারার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য রুখতে সাহায্য করে।
খেজুর
সৌদি আরবের খেজুর খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। বাদামি বা খয়েরি রঙের সুন্দর একটি ফল খেজুর। খেজুরের মিষ্টি স্বাদের কারণে অনেকেই ভেবে থাকেন, ডায়াবেটিক রোগীদের এটা খাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু প্রচুর ফাইবারযুক্ত খেজুর আসলে ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ওষুধ হিসেবে কাজ করে খেজুর।
স্ট্রবেরি
ছোটদের খুবই পছন্দের ফল স্ট্রবেরি। লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ার কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে স্ট্রবেরি। যার ফলে স্ট্রবেরি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজম শক্তি বাড়ে, ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আপেল
আমাদের দেহের পানির পরিমাণ পূরণ করে আপেল। ডায়াবেটিক হলে অবশ্যই রোজ খান আপেল। এমনকী, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতেও খান আপেল। টাইপ টু ডায়াবেটিস রুখতে দারুণ কাজ করে আপেল।
আঙুর
দেহে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে আঙুর অনেক সাহায্য করে। আঙুরের মধ্যে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল রেসভারেট্রল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
বেদানা
আপনার শরীরে জুড়ে রক্তের পরিমাণ কম থাকে। তাহলে নিয়মিত বেদানা খেতে পারেন। সব ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে বেদানায়। এর ফ্রি র্যাডিক্যাল ডায়াবেটিসের মোকাবিলায় সাহায্য করে।
পরিশেষে কিছু কথা
এই ছিল আজকে কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করি, আজকের ডায়াবেটিস সম্পর্কিত আলোচনা আপনার অনেক ভালো লেগেছে। উপরে আমরা বেশ কয়েকটি খাবারের নাম উল্লেখ করেছে। উপরের খাবার গুলো খেলে অবশ্যই আপনি ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
যখনই আপনি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। তখন আপনাকে কিন্তু ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে না। এজন্য আপনি অবশ্যই বেশি বেশি উপুক্ত ফলগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন। কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না পর্বটি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। এরকম স্বাস্থ্য বিষয় টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে সাথে থাকবে।