আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি
আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা– বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার হল আমন্ড বাদাম। যাকে আমরা সাধারণত কাঠ বাদাম নামে চিনি। আমন্ড বাদাম আপনি কাঁচা ও ভেজা দুই ভাবেই খেতে পারবেন। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সবার পছন্দের খাবার হচ্ছে আমন্ড বাদাম।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আমন্ড বাদামের রয়েছে নানা গুণ উপকারিতা। এ সকল উপকারিতা আপনার জানা দরকার। হার্টের রোগ থেকে শুরু করে ওজন হ্রাস করা পর্যন্ত আমন্ড বাদাম কাজ করে। তাই আজকে আমরা আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি,আমন্ড বাদাম খাওয়ার অপকারিতা,আমন্ড বাদাম খাওয়ার নিয়ম,আমন্ড বাদাম কখন খাওয়া উচিত,আমন্ড বাদাম এর দাম ও আমন্ড বাদামের ছবি সম্পর্কে আলোচনা করব।
আমন্ড বাদাম কি
আমন্ড বাদাম হল লেভান্ট সহ ইরান এবং আশেপাশের দেশগুলির একটি প্রজাতির গাছ। আমন্ড বাদাম গাছের ভোজ্য এবং ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের মানুষ আমন্ড বাদাম খেতে খুবই পছন্দ করে। চলুন আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি তা জেনে নেই।
আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের মানব দেহের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে আমন্ড বাদাম। এছাড়াও আমন্ড বাদাম দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন আনন্দ বাদাম খাওয়া উচিত। আসুন আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা জেনে নেই।
হার্ট ভালো রাখে
আমন্ড বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদজ প্রোটিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম। এই সকল খনিজ উপাদান আমাদের দেহের হৃদযন্ত্রের ঘাটতি পূরণ করে। এছাড়াও ভেজানো আমন্ড বাদামে রয়েছে পলিফেনল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের হার্টের অসুখ সারিয়ে তুলতে অনেকে সাহায্য করে। এ কারণে যাদের হার্টের সমস্যা তারা নিয়মিত আমন্ড বাদাম ভিজিয়ে খেতে পারেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
লো ক্যালোরি খাদ্য তালিকার মধ্যে অন্যতম একটি খাবার হল আমন্ড বাদাম। যারা প্রতিদিন ডায়েট করে ওজন কমাতে পারছেন না তাদের জন্য অন্যতম একটি উপায় হল আমন্ড বাদাম। এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত আমন্ড বাদাম খান, তাহলে আপনার খারাপ কোলেস্টলের মাত্রা কমে যাবে। যখন আপনার দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যাবে তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও আস্তে আস্তে আপনার শরীরের মেদ কমে যাবে। যখনই আপনার শরীরের মেদ কমতে থাকবে তখন কিন্তু দেহের ওজন আগের মত থাকবে না। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা ওজন কমানোর জন্য আমন্ড বাদাম ডায়েট চাটে দিয়ে থাকে। তাই আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমন্ড বাদাম খাবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে
ডাইবেটিস রোগীদের প্রধান সমস্যা হলো রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। যখনই একজন ব্যক্তির রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তখন ডাইবেটিস রোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখন আপনি কিভাবে ডায়াবেটিকস রোগ নিয়ন্ত্রণ করবেন। এজন্য আপনার প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো আনন্দ বাদাম খেতে হবে।
আমন্ড বাদাম নিয়মিত গ্রহণ করলে লিপিড প্রোফাইলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রনে থাকে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী একটি উপায়। এছাড়াও চীনের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত একজন ডায়াবেটিস রোগে আনন্দ সেবন করে, তাহলে তার রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে যাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
বর্তমান পৃথিবীর সবথেকে দুরারোগ্য ব্যাধের মধ্যে প্রধান অবস্থায় আছে ক্যান্সার। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ক্যান্সার রোগের কোন ওষুধ বের হয় নি। কোন ব্যক্তিকে যদি একবার ক্যান্সার আক্রমণ করে তাহলে তার বেঁচে থাকা অনেক কষ্ট হয়ে যায়। ক্যান্সারের প্রতিষেধক না থাকলেও আমরা কিন্তু ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধ করতে পারি।
তেমনি ক্যান্সার রোগের একটি প্রতিরোধক হলো আমন্ড বাদাম। আমন্ড বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইটিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়াও রয়েছে প্রোঅ্যান্থোসিয়ানিডিন একটি উপাদান। এ কয়েকটি উপাদান আমাদের শরীরের ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই আমরা ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে আনন্দ বাদাম খেতে পারি।
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক
আমন্ড বাদামে রয়েছে একাধিক ভিটামিন এবং মিনারেলস। যা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আমাদের অধিকাংশ মানুষের ত্বক শীতকালে শুষ্ক হয়ে যায়। আপনার তরজাপুর শীতকালে শুষ্ক হয়ে যাবে, তখন কিন্তু আপনার ত্বক দেখতে ভালো দেখাবে না।
আবার আমাদের অধিকাংশ মানুষের চোখের নিচে কালি পড়ে। চোখের নিচে কালি পরার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। চোখের নিচে কালি পড়ার জন্য অন্যতম দায়ী হলো গাঢ় বর্ণের রক্ত নালিকা। যা আমাদের চোখের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।
এ দুটি সমস্যা সমাধান করে দেবে আমন্ড বাদাম। আপনি যদি এ দুটি সমস্যা থেকে দ্রুত সমাধান পেতে চান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আমন্ড বাদামের তেল ব্যবহার করবেন। আপনার ত্বকের যে স্থান শুষ্ক হয়েছে সেই স্থানে প্রতিদিন রাতে আমন্ড বাদামের তেল ব্যবহার করবেন। তাহলে আপনি অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভালো ফলাফল পেয়ে যাবেন।
হজমে সহায়ক
হজমের সমস্যা থেকে আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। আমন্ড বাদাম পরিপাক ক্রিয়া সহজ করে দেয়। যেটা খেলে আমাদের হজম ক্রিয়া খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে। এ জন্য আপনাকে ভেজানো আমন্ড বাদাম খেতে হবে। বিশেষ করে আমন্ড বাদামের বাইরের স্তর তুলনামূলকভাবে শক্ত হয়। এই বাইরের শক্ত স্তর যা হজমের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
হাড়কে মজবুত রাখে
বর্তমান আমাদের পৃথিবীতে অন্যতম একটি হাড়ের ক্ষয়। পৃথিবীর বিগত ৫০ বছর আগে কিন্তু হাড়ের ক্ষয় রোগ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এ রোগের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তার অন্যতম কারণ হলো পুষ্টিহীনতা ও পুষ্টিকর খাবারের অভাব। হাড় খয়রোধ করার জন্য আপনাকে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম খেতে হবে। যাদের দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ তারা কখনো হাড় ক্ষয় রোগের ভুগবে না।
এজন্য আপনাকে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান বেছে নিতে হবে,যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এমন একটি খাবার হল আমন্ড বাদাম। আপনি নিয়মিত যদি আমন্ড বাদাম ভিজিয়ে খেতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে। যখনই আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে, তখন হাড়ের গঠন আরও বেশি মজবুত হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
আমন্ড বাদাম উপস্থিত আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যাদের ত্বক শুষ্ক অবস্থায় থাকে। তারা প্রতিদিন ত্বকের জন্য বিভিন্ন রকমের মেডিসিন গ্রহণ করেন। কিন্তু আপনার হাতের কাছে এমন একটি মেডিসিন রয়েছে। যে মেডিসিন নিয়মিত ব্যবহার করলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার শুষ্ক ত্বক দূর হয়ে যাবে।
শুষ্ক ত্বক দূর করার জন্য আপনি আমন্ড বাদামের তেল ব্যবহার করবেন। যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় আমন্ড ওয়েল বলে থাকি। বাজারে প্রায় প্রত্যেক দোকানে আমন্ড ওয়েল রয়েছে। তেলের পাশাপাশি আপনি প্রতিদিন আমন্ড বাদাম খাবেন। যা আপনার জন্য বেশি কার্যকর হবে।
আমন্ড বাদাম খাওয়ার নিয়ম
আপনি এখন নিশ্চয়ই আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর এখন আপনার কাজ হল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা। আমন্ড বাদাম খাওয়ার সব থেকে উপযুক্ত সময় হলো খালি পেটে। এজন্য আপনাকে রাতে একমুঠ আমান্য বাদাম পানিতে ভেজে রাখতে হবে।
তারপর সকালে খালি পেটে ভেজানো আনন্দ বাদাম খাবেন। সকালে ছাড়াও আপনি দিনের যেকোনো সময়ে খেতে পারবেন। কিন্তু সব থেকে কার্যকারী হল সকালে খাওয়া। আপনি চাইলে ব্রেকফাস্ট হিসেবে আমন্ড বাদাম রাখতে পারেন।
আমন্ড বাদাম এর দাম
প্রাচীনকাল থেকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে আমন্ড বাদাম অন্যতম। বাংলাদেশ সহ ভারতের প্রায় প্রত্যেক অঞ্চলে আমন্ড বাদাম পাওয়া যায়। বাজারে আমন্ড বাদামের দাম খুব একটা বেশি নয়। বর্তমান বাজারে আমন্ড বাদাম ওর দাম ২৫০ দাম মাত্র ২৫০ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি আমন্ড বাদামের দাম এক হাজার টাকা। কিন্তু অঞ্চল ভেদে দামের পরিবর্তন হতে পারে।
পরিশেষে কিছু কথা
এই ছিল আজকে আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করি,আজকের আর্টিকেল আপনার অনেক ভালো লেগেছে। এ কারণে আপনি খুব মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। বহুগুণ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর একটি খাবার হল আমন্ড বাদাম। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হার্ট মজবুত রাখে ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ইত্যাদি। এরকম আরো অনেক রোগের উপকার করে আমন্ড বাদাম। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাবেন। এরকম স্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকবেন।
.jpg)
.jpg)
.jpg)